SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে এবং সেই পানি ও রস কাণ্ডের ভিতর দিয়ে পাতায় পৌঁছায়। আবার দেহে শোষিত পানি উদ্ভিদ বাষ্প আকারে দেহ থেকে বের করে দেয়। উদ্ভিদ যে প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে, দেহে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ শোষণ করে ঐ রস দেহের নানা অঙ্গে পরিবহন করে ও দেহ থেকে পানি বাষ্প আকারে বের করে দেয় সেই সব প্রক্রিয়া ব্যাপন, অভিস্রবণ, শোষণ, পরিবহন ও প্রস্বেদনের মাধ্যমে ঘটে।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
   • ব্যাপন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • অভিস্রবণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের পানি পরিত্যাগ ব্যাখ্যা করতে পারব;
   • উদ্ভিদের পানি শোষণ ব্যাখ্যা করতে পারব।

Content added By
চিত্র ৩.১ : সেন্টের ব্যাপন।

আমরা জানি সব পদার্থই কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু দিয়ে তৈরি। এ অণুগুলো সবসময় গতিশীল বা চলমান অবস্থায় থাকে। তরল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে অণুগুলোর চলন দ্রুত হয় এবং বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না অপুগুলোর ঘনত্ব দুই স্থানে সমান হয়। অণুগুলোর এরূপ চলন প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। ব্যাপনকারী পদার্থের অণু-পরমাণুগুলোর গতিশক্তির প্রভাবে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে অধিক ঘনত্বযুক্ত স্থান থেকে কম ঘনত্বযুক্ত স্থানে অণুগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রকার চাপকে ব্যাপন চাপ বলে। কোনো পদার্থের অণুর ব্যাপন ততক্ষণ চলতে থাকে যতক্ষণ না উক্ত পদার্থের অণুগুলোর ঘনত্ব সর্বত্র সমান হয়। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই পদার্থের ব্যাপন বন্ধ হয়ে যায়। 

ব্যাপন কাতে কী বোঝায় তা কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে সহজে বোঝা যায়। পরীক্ষালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে আলোচনা করে ব্যাপন সম্বন্ধে বাস্তব জ্ঞান পাওয়া যায়। নিচে ব্যাপন প্রক্রিয়ার কয়েকটি পরীক্ষা আলোচনা করা হলো-

ব্যাপনের অনেক প্রমাণ আমাদের আশে পাশেই দেখা যায়। যেমন- ঘরে সেন্ট বা আতর ছড়ালে বা ধূপ জ্বালালে সমস্ত ঘরে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপনের কারণে ঘটে। ধূপের ধোঁয়া ও সেন্টের অণুগুলো অধিক ঘনত্ব সম্পন্ন হওয়ায় সম্পূর্ণ ঘরে কম ঘনত্ব সম্পন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সমস্ত ঘর সুবাসে ভরে যায় ৷

 

ব্যাপনের পুরুত্ব : জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাপন প্রক্রিয়া ঘটে। যেমন- উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের সময় বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই অত্যাবশ্যক কাজ ব্যাপন দ্বারা সম্ভব হয়। জীবকোষে শ্বসনের সময় গ্লুকোজ জারণের জন্য অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। ব্যাপন ক্রিয়ার দ্বারা কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে যায়। উদ্ভিদ দেহে শোষিত পানি বাষ্পাকারে প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। প্রাণীদের শ্বসনের সময় অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের আদান-প্রদান ও রক্ত থেকে পুষ্টি উপাদান, অক্সিজেন প্রভৃতি লসিকায় বহন ও লসিকা থেকে কোষে পরিবহন করা ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়।

Content added || updated By

অভিস্রবণ প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য আমাদের যে বিষয়ের ধারণা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ট দুইটি দ্রবণের মধ্যে অবস্থিত পর্দার বৈশিষ্ট্য জানা। পর্দাকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, অভেদ্য পর্দা, ভেদ্য পর্দা ও অর্ধভেদ্য পর্দা।

অভেদ্য পর্দা : যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও প্রাব উভয় প্রকার পদার্থের অণুগুলো চলাচল করতে পারে না তাকে অভেদ্য পর্দা বলে। যেমন- পলিথিন, কিউটিনযুক্ত কোষপ্রাচীর। ভেদ্য পর্দা : যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয়েরই অণু সহজে চলাচল করতে পারে তাকে ভেদ্য পর্দা বলে ৷ যেমন— কোষপ্রাচীর।

অর্ধভেদ্য পর্দা : যে পর্দা দিয়ে কেবল দ্রবণের দ্রাবক অণু (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি) চলাচল করতে পারে কিন্তু দ্রাব অণু চলাচল করতে পারে না তাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে। যেমন— কোষপর্দা, ডিমের খোসার ভিতরের পর্দা, মাছের পটকার পর্দা ইত্যাদি।

আমরা লক্ষ করেছি যদি একটা শুকনা কিশমিশকে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখি তাহলে সেটি ফুলে উঠে। এটি কিশমিশ দ্বারা পানি শোষণের কারণে ঘটে এবং পানি শোষণ অভিস্রবণ দ্বারা ঘটে। অভিস্রবণও এক প্রকার ব্যাপন। অভিস্রবণ কেবলমাত্র তরলের ক্ষেত্রে ঘটে এবং একটি অর্ধভেদ্য পর্দা অভিস্রবণের সময় দুটি তরলকে পৃথক করে রাখে। কিশমিশের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা এখানে বোঝানো হলো।

চিত্র ৩.২ : কিশমিশের সাহায্যে অভিস্রবণ পরীক্ষা

আমরা জানি দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একত্রে মিশ্রিত হলে স্বাভাবিকভাবেই এদের মধ্যে ব্যাপন সংঘটিত হয়। লক্ষ করে দেখ কিশমিশের ভিতরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কিশমিশগুলো কুচকে গেছে। কিশমিশগুলো পানিতে রাখলে পানি শোষণ করে ফুলে উঠবে। কারণ কিশমিশের ভিতরে শর্করার গাঢ় দ্রবণ একটি পর্দা দ্বারা পানি থেকে পৃথক হয়ে আছে। ফলে শুধু পানির অণু কিশমিশের অভ্যন্তরে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে, কিন্তু শর্করা অণু এই রকম পর্দা ভেদ করে বাইরে আসতে পারছে না। এ ধরনের পর্দাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে। যে প্রক্রিয়ায় একই পদার্থের কম ঘনত্ব এবং বেশি ঘনত্বের দুটি দ্রবণ অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা পৃথক করা হলে দ্রাবক পদার্থের অণুগুলো কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অধিক ঘনত্বের দ্রবণের দিকে যায় তাকে অভিস্রবণ বা অসমোসিস বলে (চিত্র ৩.৩)।

Content added || updated By

জীবকোষের কোষাবরণ বা প্লাজমা পর্দা অর্ধভেদ্য পর্দা হিসেবে কাজ করে। প্লাজমা পর্দা দিয়ে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মাটিস্থ পানি মূলরোমের মধ্যে প্রবেশ করে বা বাইরে আসে। কোষস্থিত পানি খনিজ লবণকে দ্রবীভূত করে কোষ রসে পরিণত হয়। সুতরাং কোষের মধ্যে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোকে সচল রাখার জন্য অভিস্রবণের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ার দ্বারা উদ্ভিদ কোষের রসস্ফীতি ঘটে। কাণ্ড ও পাতাকে সতেজ এবং খাড়া রাখতে সাহায্য করে। ফুলের পাপড়ি বন্ধ বা খুলতে পারে। তাছাড়া প্রাণীর অস্ত্রে খাদ্য শোষিত হতে পারে।

Content added || updated By

উদ্ভিদের পানি শোষণ পদ্ধতি : মাটি থেকে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ উদ্ভিদ দেহের সজীব কোষে টেনে নেওয়ার পদ্ধতিকে সাধারণভাবে শোষণ বলা যেতে পারে। স্থলে বসবাসকারী উদ্ভিদগুলো মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি শোষণ করে। পানিতে নিমজ্জিত উদ্ভিদ সারাদেহ দিয়ে পানি শোষণ করে। স্থলজ উদ্ভিদগুলোর মূলরোম মাটির সূক্ষ্মকণার ফাঁকে লেগে থাকা কৈশিক পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় নিজ দেহে টেনে নেয়।

চিত্র ৩.৫ : মূলের বিভিन অঞ্চল

 

মূলরোমের প্রাচীরটি ভেদ্য, তাই প্রথমে ইমবাইবিশন প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ করে এবং কোষপ্রাচীরের নিচে অবস্থিত অর্থভেদ্য প্লাজমা পর্দার সংস্পর্শে আসে। মূলরোমের কোষীয় দ্রবণের ঘনত্বের তুলনায় তার পরিবেশের স্রবণের ঘনত্ব কম থাকায় পানি (দ্রাবক) কোষের মধ্যে অন্তঃঅতিপ্রবণ প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। মূলের বাইরের আবরণ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব কোষের কোষ রসের ঘনত্ব সমান নয়। কলে কোষান্তর অভিস্রবণের কারণে মূলের এক কোষ থেকে অন্য কোবে পানির গতি অব্যাহত থাকে এবং পরিশেষে পানি কান্ডের জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে পাতায় পৌঁছায়।

ইমবাইবিশন : অধিকাংশ করেধর্মী পদার্থই পানিগ্রাহী। উদ্ভিদদেহে বিভিন্ন ধরনের কারেভধর্মী পদার্থ বিদ্যমান। যথা- স্টার্চ, সেলুলোজ, জিলেটিন ইত্যাদি। এসব পদার্থ তাদের কলয়েডধর্মী গুণের জন্যই পানি শোষণ করতে সক্ষম। কলয়েডধর্মী বিভিন্ন পদার্থ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীর) যে প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের তরল পদার্থ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি শোষণ করে তাকে ইমবাইবিশন বলে।

উদ্ভিদের খনিজ লবণ শোষণ পতি উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কতগুলো খনিজ লবণের প্রয়োজন হয় । উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের উৎস মাটির পানি। মাটি পানিতে খনিজ লবণ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।

চিত্র ৩-৬ : মূলের কোষে অতিপ্রবণ প্রক্রিয়ার পানি শোষণ

 

খনিজ লবণগুলো মাটিস্থ পানিতে দ্রবীভূত থাকলেও পানি শোষণের সঙ্গে উদ্ভিদের লবণ শোষণের কোনো সম্পর্ক নেই, দুটি প্রক্রিয়াই ভিন্নধর্মী । উদ্ভিদ কখনো লবণের সম্পূর্ণ অণুকে শোষণ করতে পারে না। লবণগুলো কেবল আয়ন হিসেবে শোষিত হয়। উদ্ভিদ মাটির রস থেকে খনিজ লবণ শোষণ দুইভাবে সম্পন্ন করে। যথা- ১. নিষ্ক্রিয় শোষণ ২. সক্রিয় শোষণ।

চিত্র ৩.৭ : মূল দ্বারা পানি ও খনিজ লবণ শোষণ
Content added || updated By

প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন উদ্ভিদের একটি বিশেষ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আমরা পূর্বের পাঠে জেনেছি, উদ্ভিদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য পানি অপরিহার্য। তাই উদ্ভিদ মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে। শোষিত পানির কিছু অংশ উদ্ভিদ তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহার করে এবং বাকি অংশ বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে পরিত্যাগ করে। উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে পাতার মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানির এই নির্গমনের প্রক্রিয়াকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে।

প্রস্বেদন প্রধানত পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে হয়। এছাড়া কাণ্ড ও পাতার কিউটিক্স এবং কার্ডের ত্বকে অবস্থিত লেন্টিসেল নামক এক বিশেষ ধরনের অঙ্গের মাধ্যমেও অল্প পরিমাণ প্রবেদন হয়। প্রস্বেদন কোথায় সংঘটিত হচ্ছে তার ভিত্তিতে প্রস্বেদন তিন প্রকার যথা- ১. পত্ররন্দ্রীয় প্রবেদন, ২. ত্বৰ্কীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন এবং ৩. লেন্টিকুলার প্রস্বেদন।

চিত্র ৩.৮ : প্রস্বেদনের স্থান

 

সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পত্ররন্দ্র এবং খালি চোখে কাণ্ডের লেন্টিসেল সহজে দেখা যায়।

চিত্র ৩.৯ : প্রবেদনের পরীক্ষা

কাজ : প্রস্বেদনের পরীক্ষা

প্রয়োজনীয় উপকরণ: টবে লাগানো গাছ, টেবিল, পানি, পলিখিন, সুভা ও ভেসলিন

পদ্ধতি : দুটি টবে লাগানো গাছ টেবিলের উপর রেখে গাছের গোড়ায় পরিমাণ মতো পানি দাও। একটি গাছকে পাতার রেখে পলিথিনের মোড়ক দিয়ে ঢেকে দাও | তারপর গাছের গোড়ার পলিথিনটি সূতা দিয়ে বেঁধে ঐ স্থানে ভেসলিনের প্রদেশ দাও। যাতে বাইরের থেকে বাতাস বা পানি যেতে না পারে। অপর গাছটির পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে একইভাবে প্রথম গাছটির মতো পলিথিন মোড়ক দিয়ে ঢেকে ফেল। গাছ দুটিকে সূর্যের পালোতে রাখ।

পর্যবেক্ষণ : কিছুক্ষণ পর দেখবে পাতাযুক্ত গাছের টবে পলিথিনের ভিতরে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে কিছু পাতাবিহীন গাছের টবে পলিথিনের ভিতরে পানি জমেনি। পাতাযুক্ত গাছের টবে পলিথিনের ভিতরে কেন বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে এবং পাতাবিহীন টবে পলিথিনে কেন পানি বিন্দু জমেনি। এ পরীক্ষা থেকে তুমি কী প্রমাণ করলে? তোমার এ পর্যবেক্ষণ থেকে তুমি কী সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।

Content added By
Content updated By

উদ্ভিদ জীবনে প্রবেদন একটি অনিবার্য প্রক্রিয়া। প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদদেহ থেকে প্রচুর পানি বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। এতে উদ্ভিদের মৃত্যুও হতে পারে। তাই আপাতদৃষ্টিতে উদ্ভিদের জীবনে প্রস্বেদনকে ক্ষতিকর প্রক্রিয়া বলেই মনে হয়। এজন্য প্রবেদনকে বলা হয় উদ্ভিদের জন্য এটি একটি "Necessary evil", তবুও প্রবেদন উদ্ভিদ জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদ তার দেহ থেকে পানিকে কে করে অতিরিক্ত পানির চাপ থেকে মুক্ত করে। প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। কোষরসের ঘনত্ব বৃদ্ধি অভাপতি বণের সহায়ক হয়ে উদ্ভিদকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণে সাহায্য করে। উদ্ভিদদেহকে ঠাণ্ডা রাখে এবং পাতার আর্দ্রতা বজার রাখে। প্রস্বেদনের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হর। পাতার প্রবেদনের ফলে জাইলেম বাহিকায় পারি যে টান সৃষ্টি হয় তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণ ও উদ্ভিদের শীর্ষে পরিবহনে সাহায্য করে।

উদ্ভিদের প্রবেদন প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মতো পরিবেশে তেমন কোনো প্রভাব রাখে না। তবে পানিচক্রে বাষ্পীভবনে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের পানি জলীয়বাষ্প হিসেবে বায়ুমণ্ডলে প্রেরণ করতে স্থলজ উদ্ভিদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে। প্রস্বেদনের ফলে প্রচুর পানি বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে পৌছায়।

Content added By

জামরা জেনেছি যে উদ্ভিদ মূলের মূলরোমের সাহায্যে মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে। এই পানি ও খনিজ লবণের প্রবণকে কাষ্ট এবং শাখা-প্রশাখার মধ্য দিয়ে পাতার পৌঁছানো দরকার। কারণ পাতাই প্রধানত এগুলোকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির রসদ হিসেবে ব্যবহার করে। আবার পাতার তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ তার দেহের বিভিন্ন অংশে যথা- কান্ড ও শাখা-প্রশাখার পাঠিয়ে দেয়। উদ্ভিদের মূলরোম দ্বারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণ মূল থেকে পাতায় পৌঁছানো এবং পাতার তৈরি খাদ্যবস্তু সারা দেহে ছড়িয়ে পড়াকে পরিবহন বলে। শোষণের মতো পরিবহন পদ্ধতি ও উদ্ভিদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক পরিবহন টিস্যুর মাধ্যমে উদ্ভিদে পরিবহন ঘটে। জাইলেমের মাধ্যমে মূল দ্বারা শোষিত পানি পাতার যায় এবং ফ্লোরেম যারা পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য সারা দেহে পরিবাহিত হয়। সুতরাং জাইলেম ও ক্লোরেম হলো উদ্ভিদের পরিবহনের পথ। উদ্ভিদের পরিবহন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিতভাবে সম্পন্ন হয়-

 

উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় এবং পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় শোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়ে জাইলেম টিস্যুতে পৌঁছায়। জাইলেমের মাধ্যমে উদ্ভিদদেহে রসের ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন হয়। ফ্লোরেমের মাধ্যমে পাতায় তৈরি খাদ্যরসের উভমুখী পরিবহন হয়।

উদ্ভিদের সংবহন বা পরিবহন বলতে প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন এবং নিম্নমুখী পরিবহনকে বোঝায়।

মাটি থেকে মূলরোমের যারা শোষিত পানি ও খনিজ লবণের দ্রবণ (রস) যে জাইলেম বাহিকার মধ্য দিয়ে পাতার পৌঁছায় তা একটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন পেপারোমিরা উদ্ভিদ। এ গাছের কাণ্ড ও মধ্য শিরা স্বচ্ছ।

চিত্র ৩.১১ : পানি পরিবহনের পরীক্ষা

কাজ : পানি পরিবহনের পরীক্ষা

প্রয়োজনীয় উপকরণ: দোপাটি অথবা পেপারোমিয়া উচ্চিল, বোতল, জুল, লাল রং, পামি

পদ্ধতি : একটি নাম কার্ডের দোপাটি অথবা পেপারোমিয়া উদ্ভি মাটি থেকে মূলসহ ভুলে মূলগুলো পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এখন একটি বোতলে পানি নিয়ে তাতে করেক ফোঁটা লাল রং মেশাতে হবে। এবার গাছের মূলসহ অংশটি রঙিন পানিতে
ডুবিয়ে রাখতে হবে।

কয়েক ঘণ্টা পরে দেখা যাবে যে কাঞ্চ এবং পাতার শিরাগুলো লাল রং ধারণ করেছে। গাছটি বোতল থেকে খুলে ফান্ডের প্রস্থচ্ছেদ বা সম্বচ্ছেদ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখ এবং ভা লিপিবদ্ধ করো। তোমার পর্যবেক্ষণ থেকে তুমি কী সিদ্ধাে উপনীত হলে এবং এতে কী প্রমাণ হলো।

নতুন শব্দ : ব্যাপন, অর্ধভেদ্য পর্দা, ভেদ্য পর্দা, অন্তঃঅভিস্রবণ, বহিঃঅভিস্রবণ, আয়ন, কোষরস, সক্রিয় শোষণ, নিষ্ক্রিয় শোষণ, প্রস্বেদন

এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম-

   - ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়া কী?

   - উদ্ভিদ-ব্যাপন ও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি, খনিজ লবণের আয়ন মাটিস্থ দ্রবণ থেকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় প্রক্রিয়ায় মূলের মূলরোম দ্বারা শোষণ করে।

   - উদ্ভিদের জাইলেম দিয়ে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ পাতায় পরিবাহিত হয়।

   - উদ্ভিদের ফ্লোয়েম দিয়ে পাতায় তৈরি খাদ্য উদ্ভিদ দেহের শাখা ও প্রশাখায় পৌঁছায়।

   - অভিস্রবণের ফলে খাদ্য তৈরির জন্য পাতায় অবিরাম পানি সরবরাহ সম্ভব হয়। 

   - প্রস্বেদনের ফলে জাইলেম বাহিকায় যে টান সৃষ্টি হয় তা মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে।

Content added || updated By